সিলেট, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ১১ বছর। এই সময়ে সিলেটের শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। এতে কখনো হয়েছেন বিতর্কিত, আবার কখনো প্রশংসিত। ভালোয়, মন্দে মিশেল সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন ক’মাস আগেই। আগের মতো তার আর ডাক পড়ে না রাজনৈতিক ময়দানে। এরপরও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারানোর পর এবার হারালেন পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) পদও। তিনি সিলেটের এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারানোর পর সিলেটের আদালতে নিয়মিত হয়েছিলেন তিনি। প্রতিদিনই পেশাগত দায়িত্ব পালনে চলে যেতেন আদালতে। সেখানেই তিনি বিকেল পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাতেন। এই সময়ের মধ্যে অবসর বুঝে রাজনীতি কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতেন। কিন্তু গতকাল থেকে আবার পুরোপুরি অবসর সময় পেলেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ভাগ্য ফেরে এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের। মহানগর সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে যান। একই সঙ্গে তিনি সিলেট জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও দায়িত্ব পান। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যস্ত মানুষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর প্রথম বার সিলেট বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নিজের কর্তৃত্ব খাটাতে গিয়ে উল্টো তিনি বিতর্কের মুখে পড়েন। এ কারনে দলীয় সভানেত্রী তাকে দ্বিতীয় দফা সাংগঠনিক সম্পাদক করার পর সিলেট থেকে সরিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব দেন। তার স্থলে নিয়ে আসেন ময়মনসিংহের আহমদ হোসেনকে। বাইরের বিভাগের দায়িত্ব পেলেও সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিলো তার। ছিলো শতভাগ কর্তৃত্ব। সিলেট থেকেই তিনি পরিচালিত করতেন ময়মনসিংহের দায়িত্ব। পরপর তিন বার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় নেতা হলেও সিলেটের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তার নাম। হন বিতর্কিতও। বিশেষ করে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভূমিকা নিয়ে তিনি বিতর্কিত হন। এদিকে- আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলের আগেই সিলেটে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে নিয়ে কানাঘুষা ছিলো। তাকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে- এমন খবর জোরালো হয়। অবশেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পদ হারান মিসবাহ সিরাজ। মিসবাহ সিরাজের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে এবার তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদের জন্য লবিং চালিয়েছেন। একই সময় ২০০৯ সালে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পান এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এরপর থেকে এই পদেও তিনি পরিবর্তন হননি। সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার কারনে সময় কম দিলেও অতিরিক্ত পিপিরা দায়িত্ব পালন করেন। এবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারানোর পর পিপি পদ নিয়ে নড়বড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হতে দুই জনের নাম শোনা গিয়েছিলো। এর মধ্যে ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও এডভোকেট মসাহিদ আলীর। অবশেষে এডভোকেট নিজাম উদ্দিনই পিপির দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব পেয়ে গতকাল দুপুরে তিনি ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন। এ সময় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে দলের নেতারা স্বাগত জানান। পরে তিনি সিলেটের আদালত এলাকায় আসেন। সেখানে অগ্রজ পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের হাত থেকে তিনি দায়িত্ব নেন। আর মিসবাহ সিরাজও তার হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।
দায়িত্ব পেলেন যারা: সিলেটের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসমূহে ৮৬ জন নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর, বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে ৬৬ জন ও সরকারি কৌশুলী, অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী ও সহকারী সরকারি কৌশুলী পদে ২০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উপ-সলিসিটর (জিপি/পিপি) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিনকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং নওশাদ আহমেদ চৌধুরীকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অ্যাডভোকেট মো. রাজ উদ্দিনকে সরকারি কৌশুলী (জিপি) করা হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া অন্যরা হলেন- বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মনির উদ্দিন, জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মফুর আলী, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর রশিদা সাঈদা খানম। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রুহুল আমিন চৌধুরী মিন্টু, জামিলুল হক জামিল, সুয়েব আহমেদ, মো. মাহফুজুর রহমান, জসীম উদ্দিন, কিশোর কুমার কর, শামসুল ইসলাম, দীনা ইয়াসমিন, রনজিৎ সরকার, আনোয়ার হোসেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাঈনুল ইসলাম, একেএম সামিউল আলম, সৈয়দ শামীম আহমেদ, ফরহাদ হোসেন খান, মো. নাসির উদ্দিন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ চৌধুরী, জুনেল আহমেদ, আব্দুল মজিদ খান মানিক, আলী মোস্তফা মিশকাতুন নূর, মো. আলতাফ হোসেন, মোস্তফা শাহীন চৌধুরী, মোস্তফা দেলোয়ার আল আজহার, আবদুর রহমান সেলিম, মো. আব্দুল হাই, মো. আব্দুল মজিদ খোকা, মিসেস এসএম পারভিন, মো. আজমল আলী, মাসুম আহমদ, মো. আবদুস সাত্তার, পান্না লাল দাশ, মো. জাহাঙ্গির আলম, বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গির, মো. শাহজাহান চৌধুরী, মো. আলাউদ্দিন, মো. আকবর হোসেন, মো. আবু সিদ্দিকী, মামুনুর রশিদ, রাখাল চন্দ্র দাশ, সাবানা ইসলাম, আসমা বেগম, মঈন উদ্দিন আহমদ, খোকন কুমার দত্ত, জুবায়ের বখত, নূরে আলম সিরাজী, বিপ্লব কান্তি দে মাধব, সাইফুল হোসেন, মো. গিয়াস উদ্দিন, সুজিত কুমার বৈধ্য, এন আই এম মাসুম চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, মো. আলমগীর, প্রবাল চৌধুরী, মো. মোহায়মিন চৌধুরী, শাহিনুল ইসলাম, সয়ফুল হোসেন, মো. কামরুল হাসান, শহিদুল হক, জমিরুল হক, আলী মরতুজা, জয়জীত আচার্য্য। অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী হোসেন আহমদ, মো. আজিজুর রহমান, বিনয় ভূষন দাশ, নিরঞ্জন চন্দ্র সরকার নিয়োগ পেয়েছেন। সহকারী সরকারি কৌশুলী মো. আব্দুল কুদ্দুছ, দেবাতোষ দেব, মো. শহিদুল ইসলাম, বিপ্রদাম ভট্টাচার্য্য, মো. ইয়াকুতুল বাছিত, দেবাশিষ কুমার দাস, এএইচএম রুহুল হুদা, সম্ভু দাস, দয়াল চন্দ্র দাস, মহিদুর রহমান তালুকদার, দিলীপ কুমার কর, মহি উদ্দিন, সৌরভ দত্ত চৌধুরী, বিজয় কুমার দেব, বিপ্লব চক্রবর্তী। বিজ্ঞপ্তিতে উপ-সলিসিটর (জিপি/পিপি) মো. মনিরুজ্জামান ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, সিলেট জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সমূহে পূর্বে নিয়োগকৃত সকল আইন কর্মকর্তাকে তাদের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানক্রমে নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
Leave a Reply